
মোঃরিফাতুন্নবী রিফাত,গাইবান্ধাঃ গাইবান্ধা সদর উপজেলায় চলতি বোরো (ইরি) মৌসুমে ধানে উপকারী ও অপকারী পোকার উপস্থিতি শনাক্তকরণের জন্য আলোক ফাঁদ ব্যবহার দিন দিন জনপ্রিয় হচ্ছে। কৃষি জমির পাশে স্থাপন করলে উপকারী ও অপকারী পোকারা বাল্বের আলোতে আকৃষ্ট হয়ে এই ফাঁদে আটকা পড়ে মারা যায়। এর মাধ্যমে ক্ষতিকর পোকার উপস্থিতি শনাক্ত করা সম্ভব হয় এবং পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা যায়।
সদর উপজেলার বেশ কয়েকটি ইউনিয়নে রোপা আমন ধানের জমিতে পোকার উপস্থিতি শনাক্তকরণের জন্য আলোক ফাঁদ স্থাপন করা হয়েছে। ক্ষতিকর পোকার আক্রমণ থেকে ফসলকে রক্ষা করতে কৃষি অফিসের পরামর্শে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের সহায়তায় কৃষকরা এসব আলোক ফাঁদ স্থাপন করেছেন।
গাইবান্ধা সদর উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এ উপজেলায় চলতি বোরো মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২১ হাজার ২৭২ হেক্টর। এর মধ্যে অর্জিত হয়েছে ২১ হাজার ২৯৬ হেক্টর। এ মৌসুমে বিভিন্ন জাতের ধান রোপণ করা হয়েছে।
তাদের মধ্যে ব্রিধান-২৮, ব্রিধান-২৯, ব্রিধান-৫০, ব্রিধান-৫৮, ব্রিধান-৭৪, ব্রিধান-৮১, ব্রিধান-৮৪,ব্রিধান-৮৮ ব্রিধান-৮৯, ব্রিধান-৯২, ব্রিধান-১০০, ব্রিধান-১০১, ব্রিধান-১০২, ব্রিধান-১০৫, ব্রিধান-১০৮, এসএল এইট এইচ, পারটেক্স-৬, নাফকো ২,এলপি-৭০, সুবর্ন ৪, হারা-২, হীরা-১২, সাথী, শংকায় ৩, এসিআই-২, ছক্কা, এরাইজ গোল্ড।
আলোক ফাঁদের বিষয়ে কথা হয় সদর উপজেলার বল্লমঝাড় ইউনিয়নের কোমরপুর গ্রামের কৃষক খালেক মিয়া’র (৫৫) সঙ্গে তিনি ভোরের আকাশকে বলেন, ফসলের ক্ষতিকর পোকামাকড় দমনে আমাদের এলাকায় আলোক ফাঁদ পদ্ধতিটি দিন দিন বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। এটি কৃষকদের জন্য উপকারী পদ্ধতি। আগে আমরা ক্ষতিকর পোকা শনাক্ত করতে জানতাম না। ফলে কীটনাশক দিয়ে স্প্রে করে পোকা দমন করার লাগতো। এতে করে বেশি খরচ হতো কৃষকদের। এখন বাল্বের সাহায্যে সহজেই ফাঁদ স্থাপন করা সম্ভব হচ্ছে। এতে সহজেই ক্ষতিকর পোকার উপস্থিতি শনাক্ত করা যাচ্ছে।
একই এলাকার আরেক কৃষক খোকন মিয়া (৪০) বলেন, আমরা তো এসব পদ্ধতি আগে জানতাম না। কৃষি অফিসারের সহায়তায় জমিতে আলোক ফাঁদ তৈরি করে পোকা দমনে অনেকটাই সফলতা পেয়েছি। একই সঙ্গে আলোক ফাঁদের সাহায্যে ক্ষতিকারক পোকা সম্পর্কে অবগত হয়ে এসব পোকা দমনে অল্প পরিমাণ কীটনাশক প্রয়োগ করেছি। এতে গত বছরের তুলনায় এ বছর কীটনাশক খরচ কমেছে কিছুটা।
উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা ইদ্রিস আলী বলেন, বোরো (ইরি) খেতে আলোক ফাঁদ স্থাপন করে ক্ষতিকর পোকামাকড় চিহ্নিতকরণসহ পোকা দমনে কৃষকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। আমার ব্লকের বেশ কয়েকটি কৃষি জমিতে ইতোমধ্যে আলোক ফাঁদ স্থাপন করা হয়েছে। ক্ষতিকর পোকা দমনে এ পদ্ধতিটি কৃষকদের মাঝে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে।
এ বিষয়ে গাইবান্ধা সদর উপজেলা কৃষি অফিসার মো. শাহাদৎ হোসেন বলেন, মূলত আলোক ফাঁদ একটি পর্যবেক্ষণ সরঞ্জাম। আলোর ফাঁদ ধানের ক্ষেতে পোকার উপস্থিতি সনাক্তকরণ ও পরোক্ষভাবে দমনে একটি পরিবেশবান্ধব পদ্ধতি। এটি তৈরিতে বৈদ্যুতিক বাল্ব, এসি/ডিসি বাল্ব বা চার্জার বাল্ব ব্যবহার করা হয়। ধানক্ষেত থেকে ১০০ মিটার দূরে বাঁশ বা কাঠের খুঁটির সাহায্যে মাটি থেকে ২-৩ ফুট ওপরে একটি বৈদ্যুতিক বাল্ব জ্বালিয়ে এর নিচে একটি পাত্রে ডিটারজেন্ট পাউডার অথবা কেরোসিন মিশ্রিত পানি রেখে ফাঁদটি তৈরি করা হয়। সন্ধ্যার পর এই ফাঁদের আলোয় আকৃষ্ট হয়ে বিভিন্ন পোকামাকড় এসে পাত্রের পানিতে পড়ে, ফলে মাঠে উপকারী বা অপকারী পোকার প্রাদুর্ভাব বা উপস্থিতি বোঝা যায় এবং সেই প্রেক্ষিতেই ফসল রক্ষার্থে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কৃষকদের পরামর্শ প্রদান করা হয় । ফলে একদিকে যেমন যত্রতত্র বলাইনাশকের ব্যবহার হ্রাস পাবে ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা হবে অন্যদিকে কৃষকের উৎপাদন খরচ কমে আসবে। উপজেলায় প্রত্যেক মঙ্গলবার সব ব্লকে একযোগে আলোকফাঁদ প্রযুক্তি বাস্তবায়ন করা হয়।