ব্যক্তিগত সহকারির মাধ্যমে ঘুষ নেন সরাইলের সাব-রেজিষ্ট্রার

 

পিবিএ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া: ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল সাব-রেজিষ্ট্রার অফিসে কর্মরত অবস্থায় মোঃ লাল হোসেন বিগত ২০১৭ সালের ৩১ ডিসেম্বর চাকুরি বিধি মোতাবেক অবসর নেন। কিন্তু লাল হোসেনকে সরকার চাকুরি থেকে বিদায় দিলেও এখানকার বর্তমান সাব-রেজিষ্ট্রার তাকে ব্যক্তিগত ক্যাশিয়ার হিসেবে নিজ দফতরে রেখে দেন। লাল হোসেন এখন সাব-রেজিষ্ট্রারের ঘুষ লেনদেন অফিসার হিসেবে দফতরে পরিচিত। সকলেই তার কাছে জিম্মি। লাল হোসেন সিগনাল দিলেই সাব-রেজিষ্ট্রার দলিল সম্পাদন করেন। তাই এখানকার সকল দলিল লেখক আগে তার টেবিলে দলিলের সকল কাগজপত্র জমা দিতে হয়।

লাল হোসেন

মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) দুপুরে সরেজমিন সরাইল সাব-রেজিষ্ট্রার অফিসে গিয়ে দেখা যায়, লাল হোসেন দফতরে সম্পাদনের জন্য দাখিল করা দলিল একের পর এক বুঝে নিচ্ছেন, পাশাপাশি টাকা গুনে টেবিলের ড্রয়ারে রাখছেন। সামনেই এজলাসে বসে দলিলে স্বাক্ষর করছেন সাব-রেজিষ্ট্রার। তবে প্রতিটি দলিলের স্বাক্ষরের সময়ে সাব-রেজিষ্ট্রার তার ক্যাশিয়ার লাল হোসেনের দিকে তাকাচ্ছেন।

এসময় সাংবাদিকদের উপস্থিতি টের পেয়ে লাল হোসেন সতর্ক হয়ে পড়েন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আমি চাকুরি থেকে বিদায় নিয়েছি ২০১৭ সালের ৩১ ডিসেম্বর। তবে বর্তমান সাব-রেজিষ্ট্রার স্যারের অনুমতিতেই আমি এখানে বসে অফিস করে আসছি দীর্ঘ দিন যাবত। দলিল গ্রহণ ও টাকা গুনে টেবিলের ড্রয়ারে রাখার বিষয়ে লাল হোসেন বলেন, সাব-রেজিষ্ট্রার অফিসে নগদ টাকা লেনদেনের নিয়ম নেই, সকল টাকা ব্যাংকে জমা হওয়ার কথা। তবে আমি স্যারের (সাব-রেজিষ্ট্রার) নির্দেশেই এসব টাকা গ্রহণ করে আসছি। সরকারি দফতরে এভাবে বসে অফিস করার বৈধতা আমার নেই, তবে সবই স্যারের নির্দেশেই করছি। স্যার সামনেই আছেন, আপনারা জিজ্ঞেস করেন।
এদিকে সাব-রেজিষ্ট্রার অফিসে কর্মরত একাধিক ব্যক্তি জানান, লাল হোসেন, স্যারের খুবই বিশ্বস্ত একজন মানুষ। স্যারের দফতরের ব্যক্তিগত সকল লেনদেন তার মাধ্যমেই হয়। তাই অনেকে লাল হোসেনকে সাব-রেজিষ্ট্রার অফিসের ঘুষ লেনদেন অফিসার হিসেবে চিনেন।
সরাইল সাব-রেজিষ্ট্রার অফিসের অফিস সহকারি মোঃ সুরুজ মিয়া বলেন, লাল হোসেন থাকাতে স্যারের কাজ করতে খুব সহজ হয়। আমরাও তার কাছ থেকে অনেক কাজ শিখে নিচ্ছি। দফতরের ‘মোহরার’ শরিফুল ইসলাম বলেন, লাল হোসেন স্যারের ব্যক্তিগত লোক। দফতরের গুরুত্বপূর্ণ কাজ তার মাধ্যমে সম্পন্ন হয়। তাই আমিও তার কাছ থেকে শিখছি।

সরাইল সাব-রেজিষ্ট্রার মোঃ আবদুর রশিদ বলেন, দফতরের কাজের সুবিধার জন্যে লাল হোসেনকে এখানে টেবিলে বসানো হয়েছে। ব্যাংক ছাড়াও কিছু কিছু বিষয়ে এখানে নগদ লেনদেন করার বিধান আছে। তাই এসব অর্থ লাল হোসেনের মাধ্যমে নেওয়া হয়, তবে তা ঘুষ নয়।

পিবিএ/এআই/হক

আরও পড়ুন...