মন্ত্রীরা দেশে-বিদেশে অপপ্রচার চালাচ্ছেন: রিজভী

জালিয়াতির নির্বাচন করতে নিজেরা নিজেদের হত্যা করে সেই দায় সরকার প্রধান বিরোধী দলের ওপর চাপাচ্ছেন বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের জবাবে রিজভী বলেছেন, দেশবাসী ও আন্তর্জাতিক বিশ্ব সবাই জানে যে, হত্যা, নিপীড়ন নির্যাতনের মাধ্যমে বিরোধী দল নিশ্চিহ্ন করার ধারাবাহিক কর্মকাণ্ডে প্রধানমন্ত্রীর অবৈধ সরকারের সুপ্রতিষ্ঠিত নীতি। তিনি কিনা বিরোধী দলের উপর দোষ চাপাচ্ছেন। তাহলে পিরোজপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি স্বতন্ত্রপ্রার্থীর কর্মী নিহত হলেন নৌকার সমর্থকদের দ্বারা কিভাবে? একটা ‘চিটিং’ নির্বাচন করতে নিজেরা নিজেদের হত্যা করছে। এই কারসাজির নির্বাচনকে ঘিরে প্রায় প্রতিদিন হত্যার শিকার হচ্ছেন গণতান্ত্রিক সংগ্রামের কর্মীরা। মানিকগঞ্জের বিপ্লব হাসান বিপুল, কক্সবাজারে ৭ নভেম্বর বিএনপি নেতা জাগির হোসেন, নওগাঁ বিএনপি নেতা কামাল, বগুড়ার আব্দুল মতিন সহ নভেম্বর মাসেই ১৯/২০ জন বিএনপি, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা নিহত হয়েছেন।

বৃহস্পতিবার বিকালে এক ভার্চ্যুয়াল সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। রিজভী বলেন, মন্ত্রীরা ৭ই জানুয়ারি আরেকটি জালিয়াতির নির্বাচন অনুষ্ঠিত করার জন্য বিরোধী দলকে নিষ্ঠুর দমনের পাশাপাশি দেশে-বিদেশ নির্লজ্জ মিথ্যাচারে নিজেদেরকে লিপ্ত রেখেছেন। কারচুপি নির্বাচন কন্টকমুক্ত করতে মন্ত্রীরা দেশে বিদেশে নিজেদের মানসম্মান খুইয়ে অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের যুক্তরাষ্ট্র ‘ম্যানেজ’ হয়ে যাওয়ার বক্তব্য ডাহা মিথ্যা এবং এটি সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছে যুক্তরাষ্ট্র। তারা এটিকে ‘ডিপ ফেক নিউজ’ বলে অভিহিত করেছে।

যুক্তরাষ্ট্র ম্যানেজ নয় বরং তারা গণহারে বিরোধীদের গ্রেফতার ও নির্যাতনের উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। মন্ত্রীদ্বয়ের বক্তব্য কূটনৈতিক আচরণের ইতিহাসে এটি একটি বড় ধরনের কেলেঙ্কারি। অর্থবিত্ত, টাকা পাচার, অঢেল সম্পত্তির মালিক, গার্ড অব অনার, নিরাপত্তা বেষ্টনীর মায়া ভুলতে পারছেন না বলেই মিথ্যা, বানোয়াট ও নৈতিক অনাচারমূলক বক্তব্য দিতে বিবেকের অনুতাপ বোধ করেন না অবৈধ সরকারের প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে মন্ত্রীরা। তিনি বলেন, বিরোধীদল হীন একটি এক দলীয় ডামি নির্বাচন মঞ্চস্থ করতে ভোট ডাকাত সরকার গোটা রাষ্ট্রযন্ত্রকে অন্যায়ভাবে ব্যবহার করছে। একাত্তরের চেয়ে ভয়াবহ একটা সংকটের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে প্রিয় মাতৃভূমি। এখানে দেশের ১৮ কোটি মানুষ এবং গণতান্ত্রিক বিশ্বের বিপক্ষে দাড়িয়ে আওয়ামী ডামি, আওয়ামী স্বতন্ত্র, আওয়ামী নৌকা, মনোনীত নৌকা, অনুমতিক্রমে স্বতন্ত্র, বিদ্রোহী নৌকা আওয়ামী জোট, আওয়ামী পার্টির এক অদ্ভুত কিম্ভুতকিমাকার নির্বাচনের আয়োজন চলছে। এক ক্লাবের খেলা! খেলোয়াড়ও একই দলের। যেটা লাউ সেটাই কদু। নিজেরাই নিজেদের বিরোধী দল! ভোটারদের কাছে আহ্বান জবরদস্তি করলেও ভোট কেন্দ্রে যাবেন না। ভোট বর্জন করুন।

বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, গত দেড় মাসের বেশি সময় ধরে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় অবরুদ্ধ করে রেখেছে পুলিশ। নয়াপল্টনের ত্রিসীমায় যেতে পারেন না আমাদের নেতারা। বিএনপি চেয়ারপার্সনের গুলশানের কার্যালয়েও নজরদারি করছে আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী। গতকাল গভীর রাতে পুলিশ গুলশানস্থ কার্যালয়ে তাণ্ডব চালিয়েছে। একটি রাজনৈতিক দলের কার্যালয়ে প্রবেশ বা তল্লাশি করতে গেলে অনুমতি নেয়ার নিয়ম রয়েছে। পুলিশ সেখানে হানা দিয়ে কক্ষে কক্ষে তল্লাশি চালিয়েছে। শহীদ বুদ্ধিজীবীদের শ্রদ্ধা জ্ঞাপনের জন্য সেখানে রাখা পুস্পস্তবকসহ আনুসঙ্গিক সবকিছু নিয়ে যায়। আবার হুমকিও দিয়েছে কেউ অফিসে গেলে গ্রেফতার করবে। বুদ্ধিজীবীদের শ্রদ্ধা জ্ঞাপনে বাধার সৃষ্টি এবং মহান বিজয় দিবসের বিজয় র‌্যালি করার অনুমতি দিতেও তারা টালবাহানার মাধ্যমে তারা একাত্তরের হানাদার বাহিনীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। স্বাধীনতা যুদ্ধের চুড়ান্ত ক্ষণে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান শহীদ বুদ্ধিজীবীদের নৃশংসভাবে হ্ত্যা করেও মহান মুক্তিযুদ্ধের বিজয় ঠেকানো যায়নি, বর্তমান স্বৈরাচারী সরকার গুম, খুন ও শ্বেত সন্ত্রাসের মাধ্যমে পাতানো প্রহসনের নির্বাচনের পায়তারা করলেও নিজেদের পতন ঠেকাতে পারবে না। সারাদেশে গ্রেপ্তারের চিত্র তুলে ধরে রিজভী বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে ১২৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এছাড়া ৬টি মামলায় ৬২৫ জনকে আসামি করা হয়েছে।

আরও পড়ুন...