
২০০৫ সাল। মাত্র ১৬ বছর ২৬৭ দিন বয়সে ক্রিকেটের মক্কাখ্যাত লর্ডস ক্রিকেট গ্রাউন্ডে টেস্ট অভিষেক হলো এক কিশোরের। ক্রিকেটের ঐতিহ্যবাহী এই মাঠে এত কম বয়সে অভিষেক হয়নি আর কারো।
সেই ম্যাচটি দেখতে হাজির হয়েছিলেন ইতিহাসবিদ ডেভিভ ফ্রিথ। উইজডেন ক্রিকেট মান্থলির এ প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক সেই ছেলেটার খেলা দেখে বলেছিলেন, ‘মনে হচ্ছে এই ছেলের মধ্যে ভিন্ন কিছু আছে।’ বলা হচ্ছে মুশফিকুর রহিমের কথা।
সেই ছোট্ট কিশোর আজ পা দিলেন ৩৬ বছরে। উত্তরবঙ্গের রাজধানীখ্যাত বগুড়ায় ১৯৮৭ সালের আজকের এই দিনে জন্মগ্রহণ করেন মুশফিক। ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে একদম নিচের দিকে নামতেন মুশি। অথচ আজ তিনি পরিণত হয়েছেন টাইগার ক্রিকেটের ভরসায়, হয়েছেন মিস্টার ডিপেন্ডেবল।
৩৫ বছর পূর্ণ করা মুশফিকের জন্মদিনে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন জাতীয় দলের আরেক উইকেটরক্ষক ব্যাটার লিটন কুমার দাস। নিজের ফেসবুক পেইজে তিনি লেখেন, ‘হ্যাপি বার্থডে মুশফিকুর রহিম ভাই। আপনার সঙ্গে মাঠ এবং মাঠের বাইরে আরো অসংখ্য স্মৃতি তৈরি করতে চাই। আপনার পরিশ্রম ও ত্যাগী মানসিকতা আমাদের সবসময়ই অনুপ্রাণিত করে।’
২০০৫ সালে দলের ব্যাকআপ উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান হিসেবে ইংল্যান্ড সফরে যান মুশফিক। সেখানে প্রস্তুতি ম্যাচে সাসেক্সের বিপক্ষে ৬৩ রানের ইনিংস, এরপর নটিংহ্যাম্পশায়ারের বিপক্ষে অপরাজিত ১১৫ রানের ইনিংস খেলেন।
ক্যারিয়ারের প্রথম পাঁচ ইনিংসের মধ্যেই তিনে নামার সুযোগ পেয়ে ফিফটি করেন মুশফিকুর রহিম। এরপর ভারতের বিপক্ষে ২০০৭ বিশ্বকাপে বাংলাদেশের স্মরণীয় জয়ে মুশফিক তিনে নেমে ৫৬ রানের একটি অপরাজিত ইনিংস খেলেছিলেন। যদিও মুশফিকের ব্যাটিং অর্ডার তখনও ছিল অনিয়মিত।
এরপর ২০১১ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক ছিলেন মুশফিকুর। তার অধীনে বাংলাদেশ টেস্টে অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, শ্রীলংকার মতো পরাশক্তিদের হারিয়েছে। প্রথমবারের মতো খেলেছে এশিয়া কাপের ফাইনাল।
সব মিলিয়ে ৩৭টি ওয়ানডে, ৩৪টি টেস্ট এবং ২৩টি টি-২০ ম্যাচে বাংলাদেশ দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন মুশফিক। সর্বশেষ আয়ারল্যান্ড সিরিজে বাংলাদেশের হয়ে ওয়ানডেতে দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ড গড়েন এই উইকেটকিপার-ব্যাটার। ৬০ বলে ১০০ রান তোলেন তিনি, যদিও ম্যাচটি বৃষ্টিতে ভেসে যায়।
সেদিনের সেঞ্চুরির মাধ্যমে মুশফিক ওয়ানডেতে নবম ম্যাজিক ফিগারের দেখা পান। এখন পর্যন্ত ২৪৫ ওয়ানডে খেলে ৭০৪৫ রান করেছেন তিনি। যার মধ্যে ৪৩টি অর্ধশতকও রয়েছে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশের হয়ে তৃতীয় সর্বাধিক রান সংগ্রাহক মুশফিক। তার ওপরে রয়েছেন সাকিব ও তামিম।
ক্রিকেটে মুশফিকের সবচেয়ে স্মরণীয় কীর্তি সাদা পোশাকে। এখন পর্যন্ত মিস্টার ডিপেন্ডেবল ৮৫টি টেস্ট খেলেছেন। দেশের ইতিহাসের প্রথম ডাবল সেঞ্চুরিয়ান এবং এখন পর্যন্ত একমাত্র ব্যাটার হিসেবে টেস্টে ৩টি ডাবল সেঞ্চুরি তার।
মুশফিক মোট ১০টি সেঞ্চুরি ও ২৬ হাফ সেঞ্চুরিতে টেস্টে ৫৪৯৮ রান করেছেন। যা এই ফরম্যাটে বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ। এছাড়া ১০২টি টি-২০ ম্যাচ খেলেছেন মুশফিক। এ ফরম্যাটটিতে তিনি ১৫০০ রান করেছেন। ২০২২ সালে টি-২০ থেকে অবসর নিয়েছেন তিনি।
টি-২০ থেকে বিদায় নিলেও ওয়ানডে আর টেস্টে টাইগার ভক্তদের আরো অনেক রান উপহার দেবেন মুশফিক, জন্মদিনে এমন প্রত্যাশা করাই যায়।