
উমর ফারুক আল হাদী, পিবিএ,ঢাকা: র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন- র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান। ২০১৪ সালের ২৩ জুলাই থেকে তিনি এই পদে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। দীর্ঘ পাঁচ বছর দায়িত্ব পালনের পর মেয়াদ শেষে আজ বুধবার (১২ জুন) ছিল এই পদে তার সর্বশেষ কর্মদিবস। এখন তিনি আবার তার আগের জায়গায় নৌবাহিনীতে ফিরে যাবেন। এর আগে তিনি নৌবাহিনী থেকে র্যাবে এসেছিলেন।
এর আগে তিনি সিলেটে র্যাব-৯ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক ছিলেন। সেখানে অনেক বড়-বড় অভিযান পরিচালনা করেছিলেন। এর মধ্যে অন্যতম ছিল হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার সীমান্তবর্তী সংরক্ষিত সাতছড়ি বনাঞ্চলে পাঁচটি বাংকারের খোঁজ পাওয়া। র্যাব সেখান থেকে শতাধিক রকেট লঞ্চার, অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করে। এটি ছিল র্যাবের এখন পর্যন্ত বৃহৎ ও সবচেয়ে সফল অভিযান।
সর্বশেষ কর্মদিবস উপলক্ষে র্যাব সদর দপ্তরে বার্তা সংস্থা পিবিএ’কে তিনি একটি একান্ত সাক্ষাৎকার প্রদান করেন। এ সময় পিবিএ’র সাথে অপরাধ দমন ও আইন-শৃংখলা রক্ষায় র্যাবের সাফল্য-ব্যার্থতাসহ বিভিন্ন বিষয়ে কথা হয়।
মুফতি মাহমুদ জানান, র্যাব আসলে ৬/৭টি বাহিনীর সমন্বয়ে গঠিত একটি এলিট ফোর্স। পুলিশ ও সামরিক বাহিনীর সকল শাখা থেকে সবচেয়ে চৌকশ অফিসারদের নিয়ে এই বিশেষ বাহিনী গঠনা করা হয়েছে, যা খুব কম দেশেই রয়েছে। আমরা যারা বিভিন্ন বাহিনী থেকে এখানে এসেছি, প্রত্যেকেই নিজ নিজ বাহিনীতে যথেষ্ট সুনামের সাথে কাজ করেছি এবং তারা যথেষ্ট অভিজ্ঞ।এটি একটি মিশ্র বাহিনী এবং অভিজ্ঞ বাহিনীদেরকেই র্যাবে আনা হয় এবং এখানে আসার পর তারা তাদের অভিজ্ঞতার আলোকে কাজ শুরু করেন। এখন র্যাবের যে অবস্থান- র্যাব বর্তমানে অত্যন্ত চৌকশ একটি বাহিনী।
র্যাবের সফলতা প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে মুফতি মাহমুদ বলেন, র্যাবের সবচেয়ে বড় সফলতা হলো জঙ্গি দমন, মাদক বিরোধী অভিযান পরিচালনার মাধ্যমে মাদকের বিস্তার রোধ এবং ভেজাল প্রতিরোধ সহ অপরাধ নিয়ন্ত্রণ। তিনি বলেন, র্যাবকে তো অনেকগুলো সেক্টরে কাজ করতে হয়, কোন একটি বিশেষ সেক্টরের মধ্যে তো আমাদের কাজ সীমাবদ্ধ নয়। তারপরও, অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে বললে বলতে হয়, বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ দমনে র্যাবের বিশেষ সফলতা রয়েছে। বিশেষ করে, জেএমবি যখন আত্মপ্রকাশ করে, সে সময় শায়খ আব্দুর রহমান, বাংলা ভাই – এদেরকে তো র্যাবই গ্রেফতার করেছিল। সে সময় অনেক বড় বড় অভিযান পরিচালনা করে জেএমবির তৎপরতা অনেকাংশে দমন করতে পেরেছিল র্যাব।
তারপরও, তাদের তৎপরতা যে ভিতরে ভিতরে চলছিল তার বহিঃপ্রকাশ তো হলি আর্টিজান ঘটনার মাধ্যমে দৃশ্যমান হয়। এরপর জঙ্গিবাদ দমনে র্যাব আবার বিশেষ অভিযান পরিচালনা শুরু করে। র্যাবের অভিযানের কারণে বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ এখন সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে।
এ ছাড়া মাদক বিরোধী অভিযানের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এক সময় ফেনসিডিল, পরে ইয়াবা খুবই সহজলভ্য হয়ে পড়েছিল। এ সবই কিন্তু বাইরে থেকে আসে, আমাদের দেশে এগুলোর উৎপাদন হয় না। র্যাবের অভিযানের ফলে ইয়াবার বিস্তার কমে এসেছে। আমরা এটাকে এখন বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি, কারণ, মাদক হলো সব অপরাধের মূল। র্যাবের চেষ্টা হচ্ছে মাদককে যথাসম্ভব নির্মূল করা। তবে একেবারে নির্মূল করা হয়তো সম্ভব হবে না। তবে র্যাব চেষ্টা করে যাবে।
তিনি ভেজাল ঔষধের বিরুদ্ধে অভিযানের কথা উল্লেখ করে বলেন, এখানে রাষ্ট্রের বিভিন্ন সংস্থার যেমন দায়িত্ব রয়েছে, তেমনি ক্রেতারও দায়িত্ব রয়েছে। ক্রেতাদের উচিত, ঔষধ কেনার সময় মেয়াদ তারিখ, দাম ইত্যাদি ভালভাবে দেখে নেয়া।
মুফতি মাহমুদ বলেন, আমরা যদি বিগত চার/পাঁচ বছরের কথা বিবেচনায় নেই, এই সময়ে যে কয়েকটি বড় বড় অভিযান পরিচালিত হয়েছে এবং সুন্দরভাবে সম্পন্ন হয়েছে, তাতে এই সদস্যদের অভিজ্ঞতা, জ্ঞান ও বুদ্ধিমত্তার প্রমাণ কিন্তু পাওয়া যায়। এর ফলে, আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী হিসেবে র্যাবের গ্রহণযোগ্যতা অনেক বেড়েছে। র্যাব বাংলাদেশের মানুষের আস্থার প্রতীকে পরিণত হয়েছে। তিনি মনে করেন, র্যাব আজকের অবস্থানে এসেছে তার কাজের মাধ্যমে।
মুফতি মাহমুদ বার্তা সংস্থা পিবিএ’র কার্যক্রমের প্রশংসা করেন এবং এর উত্তরোত্তর সফলতা কামনা করেন।
পিবিএ/এএইচ