হাবিব সরোয়ার আজাদ, পিবিএ, সিলেট : সুনামগঞ্জের শিল্পনগরী ছাতকে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া বন্দুক যুদ্ধের ঘটনায় আওয়ামী লীগ নেতা পৌর মেয়র আবুল কালাম চৌধুরীর সহোদর অপর আওয়ামী লীগ নেতা শামীম আহমদ চৌধুরী সহ পাঁচ সহোদের পাঁচ আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে।,
রবিবার সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট আগ্নেয়াস্ত্রেও লাইসেনস বাতিলের বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেন। এর আগে শনিবার পাঁচ সহোদরের আগ্নেয়াস্ত্র’র লাইসেন্স বাতিলের আদেশ জেলা প্রশাসন সুনামগঞ্জের ওয়েব সাইটে প্রকাশিত হয়।, আদেশের অনুলিপি প্রধান মন্ত্রীর মুখ্য সচিব, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের জননিরাপক্তা বিভাগের সচিব, ব্যবস্থাপণা পরিচালক বাংলাদেশ মেশিন টুুলস ফ্যাক্টরী লিমিটেড গাজীপুর সেনানিবাস সহ সংশ্লিষ্ট সকল দফতরে প্রেরণ করা হয়েছে।
যেসব আগ্নেয়াস্ত্র ও যাদের লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে: ছাতক বাগবাড়ির মৃত আলহাজ্ব আরজ মিয়া চৌধুরীর ছেলে শাহীন আহমদ চৌধুরীর একটি ডিবিবিএল বন্দুক, তার সহোদর জামাল আহমদ চৌধুরীর পর্তুগালের তৈরী একটি এসবিবিএল বন্দুক, সহোদর জেলা আওয়ামী লীগ নেতা শামীম আহমদ চৌধুরীর এক্সটা ব্যারেলে একটি শটগান , সহোদর কামাল চৌধুরীর তুর্কির তৈরী এক্সটা ব্যারেলে একটি
শটগান, তাদের অপর সহোদর আহমদ সাখাওয়াত চৌধুরী সেলিমের তুর্কির তৈরী এক্সটা ব্যারেলের একটি শটগান।
যে কারনে লাইসন্স বাতিল করা হয়েছে: গত ১৪ মে মঙ্গলবার রাতে সুনামগঞ্জের শিল্পনগরী ছাতকের সুরমা নদীর নৌপথে টোল আদায়ে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ছাতক
পৌর মেয়র আবুল কালাম চৌধুরী ও তার সহোদর জেলা আওয়ামী লীগ তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক শামীম আহমদ চৌধুরী এ দুই আওয়ামী লীগ নেতার লালিত গ্রুপের বন্দুকযুদ্ধে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিরীহ ভ্যান চালক সাহাবউদ্দিন (৪৫) নিহত হয়। তিনি পৌর শহরের আবদুস ছোবানের ছেলে।
এছাড়াও ওই ঘটনায় ছাতকের ওসি. দুই এসআই চার পুলিশ সদস্য সহ আহত হন অর্ধশতাধিক লোকজন। সংঘর্ষে দুই পক্ষই প্রকাশ্যে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করে। এ ঘটনায় ছাতক থানায় পুলিশ এসল্ট, হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে পৃথক তিনটি মামলা দায়ের করা হয়।
ঘটনার পরপরই প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ এবং স্থানীয় সূত্র জানায়, ছাতকের সুরমা নদীতে বালু পাথর সিমেন্ট পরিবাহী কার্গো, জাহাজ বাল্ক হেড নৌকা থেকে চাঁদা সংগ্রহে সম্প্রতি ছাতক পৌরসভার মেয়র নিয়ন্ত্রিত ৯ কাউন্সিলর জোট বেধে শাহজালাল সমিতি নামে একটি সংগঠন গঠন করেন।
এই সংগঠনের ব্যানারে পৌর শহর ঘেঁষে বয়ে চলা সুরমা নদীতে বালু, পাথর, সিমেন্ট পরিবাহী কার্গো, জাহাজ বাল্ক হেড নৌকা থেকে টোল আদায়ের নামে চাঁদা উত্তোলন করা হতো।
এনিয়ে ফেসবুকে লেখালেখির জের ধরে ছাতক পৌরসভার মেয়র আওয়ামী লীগ নেতা কালাম চৌধুরী ও তার কাউন্সিলদের সঙ্গে তারই প্রতিপক্ষ সহোদর শামীম আহমদ চৌধুরীর গ্রুপের মধ্যে বিরোধের জের ধরে ওই
রাতে বন্ধুকযুদ্ধে জড়ায় দুই পক্ষ। সুরমায় নৌযান থেকে অতিরিক্ত হারে চাঁদা আদায় করা নিয়ে দুই পক্ষ আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে মুখোমুখি অবস্থানে দাঁড়ায়।
এদিকে সংঘর্ষের পর পুলিশ অভিযান চালিয়ে ঘটনার রাতেই পৌর মেয়র শামীম চৌধুরীর ভাই জামাল চৌধুরী, চাচা এলাইস চৌধুরীসহ কমপক্ষে ২৮ জনকে আটক কওে পরদিন আদালতের মাধ্যমে জেলা কারাগারে
পাঠায়।
এ ব্যাপারে ছাতক থানার (ওসি) গোলাম মোস্তফা বলেন, পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ও ফাঁকা গুলি ছুঁড়ে সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হলেও আমিসহ ওই রাতে পুলিশের সাত সদস্য আহত হই। পরবর্তীতে আমার
একটি পা থেকে অপারেশনের মাধ্যমে গুলি বের করা হয়।
বিভিন্ন সুত্র জানায়, ছাতকে আলোচিত বন্দুকযুদ্ধে লিপ্ত উভয় গ্রুপের কৌশলীরাই মেয়র ও তার সহোদরের সমর্থক যারা সরাসরি ঘটনার রাতে হত্যা, সংঘর্ষ ও বন্দুকযুদ্ধে লিপ্ত ছিলেন এমন কয়েকজন হাই প্রোপাইল দাঙ্গাবাজ এমনকি মেয়র পরিবারের লোকজনের নাম হত্যা মামলার এজাহারেই না রাখার জন্য নিহত হতদরিদ্রে ভ্যান চালকের পরিবারের লোকজনকে নিয়ে পর্দার আড়ালে হত্যা মামলার নামে সাপ-লুডু খেলে
ত্রিপক্ষীয় সমঝোতার হত্যা মামলা দায়ের করান।
রবিবার সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ পাঁচটি আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স বাতিলের আদেশ জারির বিষয়টি নিশ্চিত করে গণমাধ্যমকে বললেন, যাদের লাইসেন্স বাতিল করা
হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে ছাতক থানায় পুলিশের ওপর হামলা, হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে মামলা রয়েছে তাই জননিরাপত্তার স্বার্থে আগ্নেয়াস্ত্র লাইসেন্স প্রদান,নবায়ন ব্যবহার নীতিমালায় ২০১৬ এর ২৫ ধারার নীতিমালার ১৯ এর (চ) ধারা মোতাবেক উপরোক্ত ব্যাক্তিদের অনুকুলে ইস্যুকৃত আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স বাতিল করা হয়।
পিবিএ/এইচএএস/জেডআই