গণতান্ত্রিক বিশ্বের সাথে প্রকাশ্যে লড়াইয়ে নেমেছে সরকার

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, দেশের জনগণের আন্দোলন এবং গণতান্ত্রিক বিশ্বের সাথে প্রকাশ্যে লড়াইয়ে নেমেছে সরকার। অচিরেই এ সরকারের ক্ষমতায় থাকার সাধ চূর্ণ-বিচূর্ণ হবেই ইনশাআল্লাহ। এখন একমাত্র করুণ পতনই তাদের নিয়তি।

শনিবার (২ ডিসেম্বর) রাতে ভার্চুয়ালি এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

রিজভী বলেন, মাত্র একজন ব্যক্তির অবৈধভাবে ক্ষমতায় থাকার উদগ্র লিপ্সার কারণে বাংলাদেশ এখন চরম বিপর্যয়ের মুখে পতিত হয়েছে। বাংলাদেশকে গণতান্ত্রিক বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হয়েছে। আওয়ামী দুর্নীতিবাজরা দেশটাকে তাদের লুটপাটের স্বর্গরাজ্য বানিয়েছে। আওয়ামী লুটেরা চক্র শুধু অর্থনৈতিকভাবে দেশটাকে দেউলিয়া করেনি, দেশ এবং জনগণের স্বাধীনতাও বিপন্ন করে দিয়েছে। এই লুটেরা চক্র শুধু বর্তমান প্রজন্মকেই নয় দেশের ভবিষৎ প্রজন্মকেও ঋণে ডুবিয়েছে। ভবিষৎ প্রজন্মের উজ্জল সম্ভাবনার পথও কঠিন করে দিয়েছে। সরকারের দুর্নীতি দুঃশাসনের কারণে এমনিতেই জনজীবনে নাভিশ্বাস উঠেছে। অর্ধাহারে অনাহারে কাটছে, কৃষক, শ্রমিক, দিনমজুর, স্বল্প আয়ের মানুষের দিনকাল। এমনকি মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোও অর্থনৈতিক টানাপোড়েনে সংসার পরিচালনায় হিমশিম খাচ্ছেন। চরম অর্থনৈতিক মন্দার এমন পরিস্থিতিতে শেখ হাসিনা আবারো ক্ষমতায় থাকার সীল মোহরের একতরফা ভাগবাটোয়ারার প্রহসনের নির্বাচনের জন্য রাষ্ট্রের প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা শ্রাদ্ধ করার আয়োজন চলছে।

তিনি আরো বলেন, গণঅভিপ্রায়কে উপেক্ষা করে নৌকা, ডামি আওয়ামী লীগ এবং কতিপয় নাম গোত্রহীন ভূঁইফোড় দলছুট লোকজনকে নিয়ে ডামি নির্বাচনের নাটক মঞ্চায়ন করার জন্য জনগণের এই বিপুল অর্থ বিনষ্টের হিসাব সিইসি কাজী হাবিবুল আওয়ালদেরকে দিতে হবে। ইতোমধ্যে সরকারের মন্ত্রীরাও বলতে শুরু করেছে এই পাতানো প্রতিযোগিতাহীন ভূয়া নির্বাচন হবে কিনা তা নিয়ে তারা ঘোরতর সন্দিহান। আওয়ামী লীগ সরকারের শিল্পমন্ত্রী অ্যাডভোকেট নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন এক সভায় বলেছেন, আমরা বিশাল ষড়যন্ত্রের মধ্যে আছি। আমাদের ৭ তারিখ নির্বাচন। আমরা এখনো জানি না সেটা হবে কিনা? একটা অনিশ্চিত অবস্থা। বাস্তবতা হলো-দেশের ১৮ কোটি জনগণ এই নির্বাচন করতে দেবে না। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ছাড়া কোনো নির্বাচন দেশের মাটিতে হবে না।

এ সময় একতরফা প্রতিযোগিতাহীন ভোটারদের সাথে তামাশার নির্বাচন বন্ধ ও সংসদ ভেঙে দিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে একটি অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবি জানান তিনি।

বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, আপনারা লক্ষ্য করেছেন, কম্বোডিয়ার ৩৮ বছরের একনায়ক হুন সেনের ‘রাজ্যাভিষেক’ মডেলের নির্বাচনের পথে হাঁটছেন বাংলাদেশের একনায়ক শেখ হাসিনা। কম্বোডিয়ায় যেভাবে বছরের পর বছর নির্বাচনী তামাশার মাধ্যমে স্বৈরাচার হুন সেন নিপীড়ন-দুঃশাসন চালিয়েছে, শেখ হাসিনার তার চেয়ে অনেক বেশি অত্যাচার চলাচ্ছেন। কম্বোডিয়ার মতোই শেখ হাসিনা বাংলাদেশের একমাত্র আস্থাভাজন সর্বাধিক জনপ্রিয় বিরোধী দল বিএনপিকে নিশ্চিহ্ন করার ষড়যন্ত্র করছে। আইনের ম্যারপ্যাঁচে ফেলে কম্বোডিয়ার প্রধান বিরোধী দল ক্যান্ডেললাইট পার্টিকে নিষিদ্ধ করে হুন সেন। গত জুলাইয়ের নির্বাচন হয়েছে ওই দেশে। হুন সেনের দল কম্বোডিয়ান পিপলস পার্টি (সিপিপি) সহ ১৮টি দল। তার মধ্যে বাদ বাকি ১৭ টি দল ছিল হুন সেনের তৈরি করা ‘কিংস পার্টি’। এই ১৭টি দল ছিল কার্যালয় সর্বস্ব। জনগণের মাঝে তাদের কোনো গ্রহণযোগ্যতা ছিল না। কোনো দলেরই জনভিত্তি ছিল না। নির্বাচনে একচেটিয়া জয় পায় হুন সেনের দল কম্বোডিয়ান পিপলস পার্টি (সিপিপি)। বিদেশে নির্বাসনে থাকা ১৭ জন বিরোধী রাজনীতিবিদকে ২০ থেকে ২৫ বছরের জন্য রাজনীতিতে নিষিদ্ধ করা হয়। নিজের তৈরি করা কিংস পার্টিকে প্রতিদ্বন্দ্বী বানিয়ে অভূতপূর্ব শান্তিপূর্ণ নির্বাচন করেছিলেন হুনসেন। নির্বাচনে কোথাও সহিংসতা হয়নি। নিরপেক্ষতা ও গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে কোনো দল প্রশ্ন তোলেনি। কারণ, সেই নির্বাচন ছিল আওয়ামী লীগের এবারের নির্বাচনের মতো “আমরা আর মামুরা“ মার্কা নির্বাচন। যুক্তরাষ্ট্রসহ গণতান্ত্রিক বিশ্ব কম্বোডিয়ার হুন সেনের এই সীল মোহর নির্বাচনের তামাশা বন্ধের জন্য বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞা ও হুঁশিয়ারি দিলেও তা উপেক্ষা করে পাতানো নির্বাচন করে। নির্বাচনের পর ক্ষমতায় থাকতে পারেনি একনায়ক হুন সেন। বাংলাদেশেও স্বৈরাচার কবলিত কম্বোডিয়ার চেয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতি চলছে। গণতান্ত্রিক বিশ্বের সকল হুঁশিয়ারি ও আহ্বান উপেক্ষা করে পাতানো ডামি নির্বাচনের সার্কাস করছেন শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনার এই নির্বাচনী প্রহসন জেনে গেছে গোটা বিশ্ব। দেশের জনগনের আন্দোলন এবং গণতান্ত্রিক বিশ্বের সাথে প্রকাশ্যে লড়াইয়ে নেমেছেন শেখ হাসিনা। অচিরেই তার ক্ষমতায় থাকার সাধ চূর্ণ বিচূর্ণ হবেই ইনশাআল্লাহ। এখন একমাত্র করুণ পতনই শেখ হাসিনার নিয়তি।

তিনি বলেন, বিশেষ বাহিনী এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দিয়ে মামলা, হামলা এবং গণগ্রেফতার করে বিএনপিসহ ৬০টির বেশি রাজনৈতিক দলকে মাঠ ছাড়া করতে চালানো হচ্ছে অমানুষিক নিপীড়ন। রাজবাড়ীসহ জেলায় জেলায় লাল বাহিনী তৈরি করে বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের গ্রেফতার নির্যাতনের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। নিম্ন আদালতকে ব্যবহার করে দণ্ড দিয়ে বিএনপি’র নেতাদের নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছে। পরিস্থিতি এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যে বিএনপি চাইলেও নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না। এই পাতানো-নিয়ন্ত্রিত নির্বাচনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো প্রধান প্রতিপক্ষকে মাঠ ছাড়া করা এবং তারা যাতে নির্বাচনে অংশ নিতে না পারে তা নিশ্চিত করা। গতকাল শুক্রবার (২ নভেম্বর) যুক্তরাষ্ট্রের প্রকাশিত ‘কান্ট্রি রিপোর্টস অন টেররিজম-২০২২’ শীর্ষক প্রতিবেদনের বাংলাদেশ অংশে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলাবাহিনী বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড পরিচালনা করেছে এবং অন্যান্য মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে। জাতিসঙ্ঘসহ অন্যান্য সংস্থা ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলো বাংলাদেশে বিরোধীদলের ওপর জুলুম নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরছে।

গতকাল জাতিসঙ্ঘ পুনরায় বলেছে, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হতে হবে সবার অংশগ্রহণে। কিন্তু শেখ হাসিনা কোনো কিছু তোয়াক্কা না করে এক সর্বনাশা ধ্বংসের খেলায় মেতে উঠেছেন। এর পরিণতি তার জন্য শুভ হবে না।

আরও পড়ুন...